৩রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ । রাত ৪:৫৮ ।। গভঃ রেজিঃ নং- ডিএ-৬৩৪৬ ।।
এস.এ.এম. মুনতাসির, চট্টগ্রাম ব্যাূরো:
খুব ছোট বেলায় বাবার হাত ধরে হাতি দেখতে যেতাম আমাদের গ্রামের খুব কাছে পাহাড়ি অঞ্চলে আফজল সওদাগরের হাতির খোলায়(বর্তমানে হাতিয়াখোলা নামে পরিচিত), যেখানে অনেক গুলো হাতিকে লোহার শিকল দিয়ে বেধে রাখা হতো এবং নির্মম প্রক্রিয়ায় তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো এবং সে হাতিগুলো বিক্রি করে দিতো, পাশাপাশি কিছু হাতি জঙ্গলের গাছ, বাঁশ ও মানুষের পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা হতো, এই সব দেখে সত্যিই আমার খুব খারাপ লাগতো। বর্তমানে হাতিয়াখোলায় ‘হাতিরখোলা’ নেই কিন্তু তাদের অতৃপ্ত আত্মা এখনো ঘুরে বেড়ায় এখানকার চারপাশে, শুধু তাই নয়, কয়েক বছর পরপর হাতির পাল এসে এখানকার জনবসতি ও ফসলের মহা তান্ডব চালিয়ে যাই, মানুষ হত্যার ঘটনাও ঘটেছে, সম্প্রতি এখানকার আদর্শ গ্রামের প্রায় ৪০টি ঘর বাড়ি ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে কিন্তু কেন?
সম্প্রতি চট্টগ্রামের বেশির ভাগ পাহাড়ি অঞ্চলের বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাচ্ছে, বনাঞ্চলের বনজ সম্পদ ব্যবহারের নামে অপব্যবহার করে চলেছি, অবৈধভাবে গাছ, বাঁশ ও অন্যান্য বনজ সম্পদ উজার করে দিচ্ছি, এরফলে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বন্যপ্রাণীদের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। গত দুই সপ্তাহ যাবত দোহাজারী জঙ্গল জামিজুরির পাহাড়ি অঞ্চলে শাবক সহ প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতির লতাবাঘ জনবসতিতে দেখা দিয়েছে এবং রাতের বেলায় জনবসতিতে এসে ছাগলের খোয়ার থেকে ছাগল নিয়ে যাচ্ছে, এই নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যুগযুগ ধরে কিভাবে, বিশালদেহী হাতিকে মানুষ আয়ত্তে আনল?
মানুষকে সৃষ্টির সেরা জীব বলা হয় এবং মানুষই এটা বলে। এই সেরাটা বলে তারা বুদ্ধির কারণে। সেই বুদ্ধি দিয়েই তারা বিশালদেহী হাতিকে বাগে এনেছে। হাতি মানুষদের বিয়ে বাড়িতে পোঁছে দেয়, ঘুরতে নিয়ে যায়, সার্কাস দেখায়, এমনকি বিভিন্ন চাঁদাবাজিও করে।
হাতিকে বাগে আনতে প্রথমে তারা একদম শিশু অবস্থায় হাতিকে মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনে।এরপর হাতির উপর করা হয় নানা রকম অত্যাচার ও নির্যাতন। এই সময় হাতি-শাবকের গলায় ও পায়ে রশি, লোহার শিকল ইত্যাদি বেঁধে আটকে রেখে বিভিন্ন ডাকে সাড়া দেওয়ানো শেখানো হয়, শুঁড় দিয়ে জিনিস তোলার প্রশিক্ষণ দেয় মানুষেরা। এই ধরনের প্রশিক্ষণকে স্থানীয় ভাষায় হাদানি বলে। কোনো নির্দেশ ঠিকমতো পালন না করলে শাবককে পেটানো হয় লাঠি দিয়ে। আর অত্যাচারের ভয়ে হাতি শাবক ধীরে ধীরে তাদের সব কথা মানা শুরু করে। এই ভয় তাদের সারাজীবন থেকে যায়। ছোটবেলা থেকেই হাতিদের মাথায় এমন ভাবে ঢুকে যায় যে, তারা বড় হয়ে আর প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। ফলে মুখ বুজে তারা যন্ত্রণা সহ্য করে সারাজীবনই পিঠে বোঝা বহন করে চলে। মানুষ এমনই সৃষ্টির সেরা জীব!
হাতির পিঠে চড়া কি খুব আনন্দের? তবে কেন বিয়ে করতে বরযাত্রী হাতির পিঠে চড়ে যায়? কেন নির্বাচনী প্রচার করতে হাতির পিঠে ওঠা লাগে?
হাতির শরীরের গড়ন ঘোড়া কিংবা উটের মতো না। হাতির পিঠ ভারী ওজন বহন করার জন্য উপযুক্ত না। কারণ চলার সময় তাদের মেরুদণ্ড ওঠা-নামা করে। ফলে পেছনের হাঁড়টায় নিয়মিত চাপ পড়তে পড়তে একসময় মেরুদন্ড ক্ষয়ে বা বেঁকে যায়। এতে যে হাতি হাঁটতে পারে না তা নয়, তবে তীব্র ব্যথা নিয়ে হাঁটে যেটা সে প্রকাশ করতে পারে না। আর মানুষ তাদের উপর বসে দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে শ্বশুরবাড়িতে যায়, চাঁদাবাজি করা মাহুতদের আমরা প্রায়ই রাস্তায় দেখি। হালে নির্বাচনের প্রচারণার জন্যও হাতিদের ব্যবহার করা হচ্ছে।
মানুষ কত নির্মম, কত নিষ্ঠুর! তাদের নিষ্ঠুরতার কারণেই হাতি আজ একটি মহাবিপন্ন প্রাণী। প্রতিনিয়ত বন কেটে আমরা তাদের আবাসন ধ্বংস করছি, রাস্তা বানিয়ে তাদের চলার রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছি।
আসুন, হাতির প্রতি এমন নিষ্ঠুর আচরণের প্রতিবাদ করি। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে কিছুটা দায়িত্ব তো পালন করা উচিত মানুষদের।
বন্যপ্রাণী সহ প্রকৃতি রক্ষায় সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং এখনই এগিয়ে আসতে হবে।
Leave a Reply